Category কবিতা

স্বাধীনতা তুমি

শামসুর রাহমান স্বাধীনতা তুমি রবিঠাকুরের অজর কবিতা, অবিনাশী গান। স্বাধীনতা তুমি কাজী নজরুল ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো মহান পুরুষ, সৃষ্টিসুখের উল্লাসে কাঁপা- স্বাধীনতা তুমি শহীদ মিনারে অমর একুশে ফেব্রুয়ারির উজ্জ্বল সভা স্বাধীনতা তুমি পতাকা-শোভিত শ্লোগান-মুখর ঝাঁঝালো মিছিল। স্বাধীনতা তুমি ফসলের মাঠে কৃষকের হাসি। স্বাধীনতা তুমি রোদেলা দুপুরে মধ্যপুকুরে গ্রাম্য মেয়ের অবাধ সাঁতার। স্বাধীনতা তুমি মজুর […]

তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা

শামসুর রাহমান তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা, তোমাকে পাওয়ার জন্যে আর কতবার ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায় ? আর কতবার দেখতে হবে খাণ্ডবদাহন ? তুমি আসবে ব’লে, হে স্বাধীনতা, সাকিনা বিবির কপাল ভাঙলো, সিঁথির সিঁদুর গেল হরিদাসীর। তুমি আসবে ব’লে, হে স্বাধীনতা, শহরের বুকে জলপাইয়ের রঙের ট্যাঙ্ক এলো দানবের মত চিৎকার করতে করতে তুমি আসবে ব’লে, হে […]

একুশের কবিতা

একুশের কবিতা সুফিয়া কামাল আশ্চর্য এমন দিন। মৃত্যুতে করে না কেহ শোক, মৃত্যুরে করে না ভয়, শঙ্কাহীন, কিসের আলোক উদ্ভাসিত ক’রে তোলে ক্লান্ত দেহ, মুখ, পদক্ষেপ সংকল্পের দ্যুতি তরে দৃঢ়তার প্রচার প্রলেপ করেছে ভাস্বর। এরা যেন করেছে স্বাক্ষর মৃত্যুর পরওয়ানা প’রে বাংলা ভাষার লিখি নাম : ‘আমার মায়েরে আমি মাটি থেকে বুকে মোর তুলিয়া নিলাম’ […]

সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের কবিতা

সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের দুটি কবিতা

“জগৎ জুড়িয়া এক জাতি আছে
সে জাতির নাম মানুষ জাতি;
এক পৃথিবীর স্তন্যে লালিত
একই রবি শশী মোদের সাথী।”

রাখাল ছেলে

জসীম উদ্‌দীন ‘রাখাল ছেলে! রাখাল ছেলে! বারেক ফিরে চাও,বাঁকা গাঁয়ের পথটি বেয়ে কোথায় চলে যাও?’ ‘ওই যে দেখো নীল-নোয়ানো সবুজ ঘেরা গাঁ,কলার পাতা দোলায় চামর শিশির ধোয়ায় পা;সেথায় আছে ছোট্ট কুটির সোনার পাতায় ছাওয়া,সাঁঝ আকাশে ছড়িয়ে পড়া আবির রঙে নাওয়া;সেই ঘরেতে একলা বসে ডাকছে আমার মা-সেথায় যাব, ও ভাই এবার আমায় ছাড় না?’ ‘রাখাল ছেলে! […]

সুচেতনা

জীবনানন্দ দাশ সুচেতনা, তুমি এক দূরতর দ্বীপবিকেলের নক্ষত্রের কাছে;সেইখানে দারুচিনি-বনানীর ফাঁকেনির্জনতা আছে।এই পৃথিবীর রণ রক্ত সফলতাসত্য; তবু শেষ সত্য নয়।কলকাতা একদিন কল্লোলিনী তিলোত্তমা হবে;তবুও তোমার কাছে আমার হৃদয়। আজকে অনেক রূঢ় রৌদ্রে ঘুরে প্রাণপৃথিবীর মানুষকে মানুষের মতোভালোবাসা দিতে গিয়ে তবু,দেখেছি আমারি হাতে হয়তো নিহতভাই বোন বন্ধু পরিজন পড়ে আছে;পৃথিবীর গভীর গভীরতর অসুখ এখন;মানুষ তবুও ঋণী […]

নতুন পথিক

নতুন পথিক কাজী নজরুল ইসলাম নতুন দিনের মানুষ তোরা আয় শিশুরা আয়! নতুন চোখে নতুন লোকের নতুন ভরসায়। নতুন তারার বেভুল পথিক আস্‌লি ধরাতে ধরার পারে আনন্দ-লোক দেখাস্‌ ইশারায়। খেলার সুখে মাখ্‌লি তোরা মাটির করুণা, এই মাটিতে স্বর্গ রচিস, তোদের মহিমায়।

আবার আসিব ফিরে

আবার আসিব ফিরে ধানসিড়িটির তীরে – এই বাংলায়হয়তো মানুষ নয় – হয়তো বা শঙখচিল শালিখের বেশে,হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশেকুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব এ কাঁঠাল ছায়ায়,হয়তো বা হাঁস হ’ব – কিশোরীর – ঘুঙ্গুর রহিবে লাল পায়,সারাদিন কেটে যাবে কলমীর গন্ধভরা জলে ভেসে ভেসে,আবার আসিব আমি বাংলার নদী মাঠ ক্ষেত ভালোবেসেজলঙ্গীর ঢেউয়ে […]

জন্মেছি এই দেশে

এই বাংলার আকাশ-বাতাস
এই বাংলার ভাষা
এই বাংলার নদী, গিরি-বনে
বাঁচিয়া মরিতে আশা।

সোনার তরী

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গগনে গরজে মেঘ, ঘন বরষা।কূলে একা বসে আছি, নাহি ভরসা।রাশি রাশি ভারা ভারাধান কাটা হল সারা,ভরা নদী ক্ষুরধারাখরপরশা।কাটিতে কাটিতে ধান এল বরষা। একখানি ছোটো খেত, আমি একেলা,চারি দিকে বাঁকা জল করিছে খেলা।পরপারে দেখি আঁকাতরুছায়ামসীমাখাগ্রামখানি মেঘে ঢাকাপ্রভাতবেলা–এ পারেতে ছোটো খেত, আমি একেলা। গান গেয়ে তরী বেয়ে কে আসে পারে,দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে।ভরা-পালে […]

ভোরের পাখি বিহারীলাল চক্রবর্তী

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাল্যকালে বিহারীলাল চক্রবর্তীর কাছ থেকে কাব্যচর্চার অনুপ্রেরণা লাভ করেছিলেন। তাই তিনি বিহারীলালকে কাব্যগুরু মানতেন। সেই সাথে রবীন্দ্রনাথ তাঁকে বাংলার শ্রেষ্ঠ কবি হিসেবে অভিহিত করে ‘আধুনিক সাহিত্য’তে বলেছেন –
“…বিহারীলালের কণ্ঠ সাধারণের নিকট তেমন সুপরিচিত ছিল না। তাঁহার শ্রোতৃমণ্ডলীর সংখ্যা অল্প ছিল এবং তাঁহার সুমধুর সংগীত নির্জনে নিভৃতে ধ্বনিত হইতে থাকিত, খ্যাতির প্রার্থনায় পাঠক এবং সমালোচক-সমাজের দ্বারবর্তী হইত না।
কিন্তু যাহারা দৈবক্রমে এই বিজনবাসী ভাবনিমগ্ন কবির সংগীতকাকলিতে আকৃষ্ট হইয়া তাঁহার কাছে আসিয়াছিল তাহাদের নিকটে তাঁহার আদরের অভাব ছিল না। তাহারা তাঁহাকে বঙ্গের শ্রেষ্ঠ কবি বলিয়া জানিত।”

আকাশভরা সূর্য-তারা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আকাশভরা সূর্য-তারা, বিশ্বভরা প্রাণ, তাহারি মাঝখানে আমি পেয়েছি মোর স্থান, বিস্ময়ে তাই জাগে আমার গান॥ অসীম কালের যে হিল্লোলে   জোয়ার-ভাঁটায় ভুবন দোলে নাড়ীতে মোর রক্তধারায় লেগেছে তার টান, বিস্ময়ে তাই জাগে আমার গান॥ ঘাসে ঘাসে পা ফেলেছি বনের পথে যেতে, ফুলের গন্ধে চমক লেগে উঠেছে মন মেতে, ছড়িয়ে আছে আনন্দেরই দান, বিস্ময়ে তাই […]

ছায়াবাজী

সুকুমার রায় আজগুবি নয়, আজগুবি নয়, সত্যিকারের কথা—ছায়ার সাথে কুস্তি ক’রে গাত্রে হল ব্যথা!ছায়া ধরার ব্যবসা করি তাও জাননা বুঝি?রোদের ছায়া, চাঁদের ছায়া, হরেক রকম পুঁজি!শিশির ভেজা সদ্য ছায়া, সকাল বেলায় তাজা,গ্রীষ্মকালের শুকনো ছায়া ভীষণ রোদে ভাজা।চিলগুলো যায় দুপুর বেলায় আকাশ পথে ঘুরে,ফাঁদ ফেলে তার ছায়ার উপর খাঁচায় রাখি পুরে।কাগের ছায়া বগের ছায়া দেখছি কত […]

খুকী ও কাঠবিড়ালি

কাঠবেড়ালি! কাঠবেড়ালি! পেয়ারা তুমি খাও?
গুড়-মুড়ি খাও? দুধ-ভাত খাও? বাতাবি নেবু? লাউ?
বেড়াল-বাচ্চা? কুকুর-ছানা? তাও?-
.
ডাইনি তুমি হোঁৎকা পেটুক,
খাও একা পাও যেথায় যেটুক!
বাতাবি-নেবু সকলগুলো
একলা খেলে ডুবিয়ে নুলো!
তবে যে ভারি ল্যাজ উঁচিয়ে পুটুস পাটুস চাও?
ছোঁচা তুমি! তোমার সঙ্গে আড়ি আমার! যাও!

স্মৃতিচিহ্ন

কামিনী রায় ওরা ভেবেছিল মনে, আপনার নামমনোহর হর্ম্ম্যরূপ বিশাল অক্ষরেইষ্টক প্রস্তরে রচি, চিরদিন তরেরেখে যাবে! মূঢ় ওরা, ব্যর্থ মনস্কাম।প্রস্তর খসিছে ভূমে প্রস্তরের পরে,চারি দিকে ভগ্ন স্তূপ, তাহাদের তলেলুপ্ত স্মৃতি, শুষ্ক তৃণ কাল-নদী-জলেভেসে যায় নামগুলি, কেবা রক্ষা করে!মানবহৃদয়ভূমি করি অধিকার,করেছে প্রতিষ্ঠা যারা দৃঢ় সিংহাসন,দরিদ্র আছিল তারা, ছিল না সম্বলপ্রস্তরের এত বোঝা জড়ো করিবার,তাদের রাজত্ব হের অক্ষুণ্ন […]

সিঁড়ি

সুকান্ত ভট্টাচার্য আমরা সিঁড়ি,তোমরা আমাদের মাড়িয়েপ্রতিদিন অনেক উঁচুতে উঠে যাও,তারপর ফিরেও তাকাও না পিছনের দিকে;তোমাদের পদধূলিধন্য আমাদের বুকপদাঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায় প্রতিদিন। তোমরাও তা জানো,তাই কার্পেটে মুড়ে রাখতে চাও আমাদের বুকের ক্ষতঢেকে রাখতে চাও তোমাদের অত্যাচারের চিহ্নকেআর চেপে রাখতে চাও পৃথিবীর কাছেতোমাদের গর্বোদ্ধত, অত্যাচারী পদধ্বনি। তবুও আমরা জানি,চিরকাল আর পৃথিবীর কাছে চাপা থাকবে না।আমাদের দেহে […]

দেশ

জসীম উদ্‌দীন খেতের পরে খেত চলেছে, খেতের নাহি শেষসবুজ হাওয়ায় দুলছে ও কার এলোমাথার কেশ।সেই কেশেতে গয়না পরায় প্রজাপতির ঝাঁক,চঞ্চুতে জল ছিটায় সেথা কালো কালো কাক।সাদা সাদা বক-কনেরা রচে সেথায় মালা,শরৎকালের শিশির সেথা জ্বালায় মানিক আলা।তারি মায়ায় থোকা থোকা দোলে ধানের ছড়া;মার আঁচলের পরশ যেন সকল অভাব-হরা।সেই ফসলে আসমানীদের নেইকো অধিকার,জীর্ণ পাঁজর বুকের হাড়ে জ্বলছে […]

নিশিদিন ভরসা রাখিস

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিশিদিন   ভরসা রাখিস,   ওরে মন,   হবেই হবে। যদি পণ     করে থাকিস      সে পণ তোমার রবেই রবে।               ওরে মন,   হবেই হবে ॥ পাষাণসমান আছে পড়ে,          প্রাণ পেয়ে সে উঠবে ওরে,      আছে যারা বোবার মতন তারাও কথা কবেই কবে ॥ সময় হল, সময় হল– যে যার আপন বোঝা তোলো রে–      দুঃখ যদি মাথায় ধরিস সে […]

ঘরে মুখ মলিন দেখে

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর      ঘরে মুখ মলিন দেখে গলিস নে– ওরে ভাই,      বাইরে মুখ আঁধার দেখে টলিস নে– ওরে ভাই ॥ যা তোমার আছে মনে   সাধো তাই পরানপণে,      শুধু তাই দশজনারে বলিস নে– ওরে ভাই ॥ একই পথ আছে ওরে,   চলো সেই রাস্তা ধরে,      যে আসে তারই পিছে চলিস নে– ওরে ভাই! থাক্‌-না […]

হেমন্তকালের দুটি কবিতা

হেমন্ত – সুফিয়া কামাল সবুজ পাতার খামের ভেতর হলুদ গাঁদা চিঠি লেখে কোন্ পাথারের ওপার থেকে আনল ডেকে হেমন্তকে?   আনল ডেকে মটরশুঁটি, খেসারি আর কলাই ফুলে আনল ডেকে কুয়াশাকে সাঁঝ সকালে নদীর কূলে।   সকাল বেলায় শিশির ভেজা ঘাসের ওপর চলতে গিয়ে হাল্কা মধুর শীতের ছোঁয়ায় শরীর ওঠে শিরশিরিয়ে।   আরও এলো সাথে সাথে […]

ধান ক্ষেত

ধান ক্ষেত – জসীম উদ্‌দীন   পথের কেনারে পাতা দোলাইয়া করে সদা সঙ্কেত, সবুজে হলুদে সোহাগ ঢুলায়ে আমার ধানের ক্ষেত। ছড়ায় ছড়ায় জড়াজড়ি করি বাতাসে ঢলিয়া পড়ে, ঝাঁকে আর ঝাঁকে টিয়ে পাখিগুলো শুয়েছে মাঠের পরে। কৃষাণ কনের বিয়ে হবে, তার হলদি কোটার শাড়ী, হলুদে ছোপায় হেমন্ত রোজ কটি রোদ রেখা নাড়ি। কলমী লতার গহনা তাহার […]

শরৎ

শরৎ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আজি কি তোমার মধুর মূরতি      হেরিনু শারদ প্রভাতে! হে মাত বঙ্গ, শ্যামল অঙ্গ      ঝলিছে অমল শোভাতে। পারে না বহিতে নদী জলধার, মাঠে মাঠে ধান ধরে নাকো আর– ডাকিছে দোয়েল গাহিছে কোয়েল      তোমার কাননসভাতে! মাঝখানে তুমি দাঁড়ায়ে জননী,      শরৎকালের প্রভাতে। জননী, তোমার শুভ আহ্বান      গিয়েছে নিখিল ভুবনে– নূতন […]

ময়নামতীর চর

বরষার জল সরিয়া গিয়াছে জাগিয়া উঠেচে চর
গাঙ-শালিকেরা গর্ত খুড়িয়া বাঁধিতেছে সবে ঘর।
গহিন নদীর দুই পার দিয়া আঁখি যায় যত দূরে
আকাশের মেঘ অতিথি যেন গো তাহার আঙিনা জুড়ে;
মাছরাঙা পাখী একমনে চেয়ে কঞ্চিতে আছে বসি
ঝাড়িতেছে ডানা বন্য হংস পালক যেতেচে খসি—
তট হতে দূরে হাঁটু জলে নামি এক পায়ে করি ভর
মৎস্যের ধ্যানে বক দুটি চারি সাজিয়াছে ঋষিবর।

নব মেঘ

১৯১১ সালের ২০শে জুন (১০ই আষাঢ়, ১৩১৮) তারিখে কবি সুফিয়া কামাল জন্মগ্রহণ করেন। বরিশালের শায়েস্তাবাদ নবাব পরিবারে সুফিয়া কামালের জন্ম। তাঁর মায়ের নাম নবাবজাদী সৈয়দা সাবেরা খাতুন এবং বাবা সৈয়দ আবদুল বারি। আজ কবির জন্মদিন। শিক্ষা সভা এদিনে তাঁকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে।

পথিক বন্ধু এস এস পাপড়ি ছাওয়া পথ বেয়ে

– কাজী নজরুল ইসলাম পথিক-বন্ধু এস এসপাপড়ি-ছাওয়া পথ বেয়ে।মন হয়েছে উতলা গোতোমার আশা পথ চেয়ে।।আকাশ জুড়ে আলোর খেলাবসুন্ধরায় ফুলের মেলারঙিন মেঘের ভাসল ভেলাতোমারই আভাস পেয়ে।।সাধ জাগে ঐ পথে তোমারপেতে রাখি আমার প্রাণচলতে গিয়ে দলবে তারেচরণ পরশ ছোঁয়ায় করবে দান।তোমার ধ্যানে, হে রাজাধিরাজ!সাজ ভুলেছি, ভুলেছি কাজআসবে তুমি, সেই খুশীতেআছে আমার মন ছেয়ে।। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল […]

নিমন্ত্রণ

জসীম উদ্‌দীন তুমি যাবে ভাই – যাবে মোর সাথে, আমাদের ছোট গাঁয়,গাছের ছায়ায় লতায় পাতায় উদাসী বনের বায়;মায়া মমতায় জড়াজড়ি করি’মোর গেহখানি রহিয়াছে ভরি’,মায়ের বুকেতে, বোনের আদরে, ভা’য়ের স্নেহের ছায়,তুমি যাবে ভাই – যাবে মোর সাথে, আমাদের ছোট গাঁয়। ছোট গাঁওখানি- ছোট নদী চলে তারি একপাশ দিয়া,কালো জল তার মাজিয়াছে কেবা কাকের চক্ষু নিয়া।ঘাটের কিনারে […]

একুশের কবিতা

শামসুর রাহমান। নক্ষত্রপুঞ্জের মতো জ্বলজ্বলে পতাকা উড়িয়ে আছো আমার সত্তায়। মমতা নামের প্লুত প্রদেশের শ্যামলিমা তোমাকে নিবিড় ঘিরে রয় সর্বদাই। কালো রাত পোহানোর পরের প্রহরে শিউলি-শৈশবে ‘পাখী সব করে রব’ বলে মদন মোহন তর্কালঙ্কার কী ধীরোদাত্ত স্বরে প্রত্যহ দিতেন ডাক। তুমি আর আমি অবিচ্ছিন্ন পরস্পর মমতায় লীন, ঘুরেছি কাননে তাঁর নেচে নেচে, যেখানে কুসম-কলি সবই। […]

ছাড়পত্র

ছাড়পত্র সুকান্ত ভট্টাচার্য যে শিশু ভূমিষ্ঠ হল আজ রাত্রেতার মুখে খবর পেলুম:সে পেয়েছে ছাড়পত্র এক,নতুন বিশ্বের দ্বারে তাই ব্যক্ত করে অধিকারজন্মমাত্র সুতীব্র চীৎকারে।খর্বদেহ নিঃসহায়, তবু তার মুষ্টিবদ্ধ হাতউত্তোলিত, উদ্ভাসিতকী এক দুর্বোধ্য প্রতিজ্ঞায়।সে ভাষা বোঝে না কেউ,কেউ হাসে, কেউ করে মৃদু তিরস্কার।আমি কিন্তু মনে মনে বুঝেছি সে ভাষাপেয়েছি নতুন চিঠি আসন্ন যুগের—পরিচয়-পত্র পড়ি ভূমিষ্ঠ শিশুরঅস্পষ্ট কুয়াশাভরা […]

পেঁচা

জীবনানন্দ দাশ জন্ম নিয়েছিলেন বরিশালে, ১৮৯৯ সালের ১৮ই ফেব্রুয়ারি। তিনি মৃত্যুবরণ করেছিলেন কলকাতায়, ১৯৫৪ সালের ২২শে অক্টোবর।

সুকুমার রায়ের কয়েকটি ছড়া

কাঠবুড়ো হাঁড়ি নিয়ে দাড়িমুখো কে যেন কে বৃদ্ধ, রোদে বসে চেটে খায় ভিজে কাঠ সিদ্ধ। মাথা নেড়ে গান করে গুন্‌ গুন্‌ সংগীত- ভাব দেখে মনে হয় না জানি কি পণ্ডিত! বিড়্‌ বিড়্‌ কি যে বকে নাহি তার অর্থ- “আকাশেতে ঝুল ঝোলে, কাঠে তাই গর্ত ।” টেকো মাথা তেতে ওঠে গায়ে ছোটে ঘর্ম, রেগে বলে, “কেবা […]

কবিতা

ছন্নছাড়া

অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত গলির মোড়ে একটা গাছ দাঁড়িয়ে গাছ না গাছের প্রেতচ্ছায়া- আঁকাবাঁকা শুকনো কতকগুলি কাঠির কঙ্কাল শুন্যের দিকে এলোমেলো তুলে দেওয়া, রুক্ষ রুষ্ট রিক্ত জীর্ণ লতা নেই পাতা নেই ছায়া নেই ছাল-বাকল নেই নেই কোথাও এক আঁচড় সবুজের প্রতিশ্রুতি এক বিন্দু সরসের সম্ভাবনা।ওই পথ দিয়ে জরুরী কাজে যাচ্ছিলাম ট্যাক্সি করে। ড্রাইভার বললে, ও দিকে যাব […]

সুকুমার রায়ের কবিতা (আবোল তাবোল)

মুক্তিযুদ্ধের কবিতা

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে  জসীম উদ্‌দীনের দুইটি কবিতা

মুক্তিযোদ্ধা আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা, মৃত্যু পিছনে আগে,ভয়াল বিশাল নখর মেলিয়া দিবস রজনী জাগে।কখনো সে ধরে রেজাকার বেশ, কখনো সে খান-সেনা,কখনো সে ধরে ধর্ম লেবাস পশ্চিম হতে কেনা।কখনো সে পশি ঢাকা-বেতারের সংরক্ষিত ঘরে,ক্ষেপা কুকুরের মরণকামড় হানিছে ক্ষিপ্ত স্বরে। আমি চলিয়াছি চির-নির্ভীক অবহেলি সবকিছুনরমুন্ডের ঢেলা ছড়াইয়া পশ্চাত-পথ পিছু।ভাঙিতেছি স্কুল ভাঙিতেছি সেতু স্টিমার জাহাজ লরি,খান-সৈন্যরা যেই পথে যায় […]